ইসবগুলের ভুসি ৬টি উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি জেনে নিন
ইসবগুলের ভুশির অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা, ডায়রিয়া এবং মুত্র জনিত ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে জানেন না তাই এই আর্টিকেলে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
বাংলাদেশে ইসবগুলের ভুসি একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ বলা যেতে পারে কারণ ইসবগুলের
ভুসি অনেক উপকারিতা রয়েছে যা এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও
অপকারিতা সম্পর্কে জানানো হবে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক সময় এবং খালি পেটে
ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় সকল খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হলে আজকের এই পোস্টটি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি জেনে নিন
- ইসবগুলের ভুসি কিভাবে তৈরি হয়
- ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা
- ইসবগুলের ভুসি অপকারিতা
- ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয় এবং খাওয়ার সঠিক সময়
- ইসবগুলের ভুসি কি ওজন কমায়
- ইসবগুলের ভুসি দাম
- গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা
- লেখকের শেষ কথা
ইসবগুলের ভুসি কিভাবে তৈরি হয়
ইসবগুলের ভুসি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পণ্য। অনেকে
আমরা রোজার সময় এটি শরবতের সাথে মিশিয়ে খাই কিন্তু অনেকেই আছেন
যারা ইসবগুলের ভুসি কিভাবে তৈরি হয় সে বিষয় জানেন না।ইসবগুল
ভুসি গাছ থেকে তৈরি হয়।
ইসবগুলের ভুসির গাছের বৈজ্ঞানিক
নাম প্ল্যানট্যাগো ওভাটা (Plantago ovata) এটি একটি এক বর্ষ জিবি
উদ্ভিদ যা লম্বাতে ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি হয়। বীজ বপন করার পর দুই মাস
এর মধ্যে গাছে ফুল আসে। ১১০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল তোলার সময় হয়ে যায়।
ইসবগুলের ভুসি পরিপক্ক হওয়ার পর প্রথমে গাছ থেকে বীজগুলোকে আলাদা করে
দেয়া হয়। এবং এটি মেশিনের মাধ্যমে বীজগুলোর খোসাকে আলাদা করে ভুসিতে
রূপান্তরিত করা হয়। এবং আমরা সেই ভুসিগুলি বাজারে কিনতে পেয়ে থাকি।
ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা ইসবগুলের ভুসি নামটির সাথে অনেকেই পরিচিত কিন্তু অনেকে আমরা
ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকি কিন্তু তার উপকার এবং অপকার সম্পর্কে
তেমন একটা জানিনা। ইসবগুলের ভূসিতে অনেক পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে।
এক চামচ ইসবগুলের ভুসিতে থাকে ৫৩% ক্যালরি, ১৫ গ্রাম শর্করা,
০৯ মিলিগ্রাম আইরন এবং ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। অনেকদিন ধরে
যারা পেশাবের জ্বালাপোড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যায়
ভুগছেন।
আপনারা যারা এই সমস্যায় ভুগছেন আজকের এই আর্টিকেলটি
পড়লে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলে
আপনার পেটের এবং পেশাবের যাবতীয় সমস্যা গুলি সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
চলুন তাহলে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনে নেওয়া যাক।
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করনে
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সাধারণ মনে হলেও এই কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগটি খুবই
মারাত্মক। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শরীরের ভিতরে নানা বাধাগ্রস্থ হয় এবং
শরীর দুর্বল হয়ে যায় ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা
দেয়। এই সমস্যার সমাধানে ইসবগুলের ভুসি বেশ উপকারী।
ইসবগুলের
ভুসি পাকস্থলীর ময়লা আবর্জনা দূর করতে অনেক ভূমিকা পালন করে। প্রতি
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি গ্লাসে এক হালকা গরম পানি ভিতর এক
চামচ ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে খেয়ে নিন। দেখবেন আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে
গেছে ইনশাল্লাহ।
২. প্রসাবের জ্বালাপোড়া কমাতে
যাদের প্রসাবে অনেক দিন ধরে জ্বালাপোড়া আছে তারা ইসবগুলের
ভুসি খেতে পারেন। ইসবগুলের ভুসি প্রসবের জ্বালাপোড়া কমায়
এবং আপনার পেটকে ঠান্ডা রাখে। তাই প্রসাবের জ্বালাপোড়া
কমাতে সকাল বিকাল এবং রাতে খেতে পারেন। ৭ থেকে ১০ দিন খেলে
দেখবেন আপনার প্রসাবের জ্বালাপোড়া কিছুটা কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৩. ওজন কমাতে বেশ উপকারী
ইসুবগুলের ভুসিতে ফাইবার থাকাই খাবার হজম হতে একটু দেরি হয়
ফলে ক্ষুধা কম লাগে। তাই এই ইসুবগুলের ভুসি খেলে অনেক সহজেই
ওজন কমানো যেতে পারে।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে
একটি জিলাটিন নামক উপাদান ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে। যা আমাদের দেহে
গ্লুকোজ এবং ভাঙ্গার প্রক্রিয়াকে থামাতে বেশ কার্যকরী ফলে আমাদের
শরীরে রক্তে সুগার বাড়তে পারে না। সেজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব
সহজ হয়ে যায় তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে নিয়মিত ইসবগুলের
ভুসি খেতে পারেন।
৫. হার্ট সুস্থ রাখে
আপনার হার্ট ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন খাবার তালিকায় ইসবগুলের
ভুসি যোগ করুন। কারণ এতে রয়েছে খাদ্যআশ যা আমাদের শরীরে
আশলেস্টেটর মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এছাড়াও এটি
পাকস্থলীর খানে এক ধরনের স্নায় স্তর সৃষ্টি করে। যা খাদ্য প্রশনে
কোলেস্টেরল বাধা দেয়। তাছাড়া রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে
এটি বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
৬. গ্যাসের সমস্যা প্রতিরোধে
আমাদের বাংলাদেশের প্রায় মানুষেরই গ্যাসিটিক সমস্যা প্রধান কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। তাই আপনি যদি গ্যাসের ঠিক সমস্যা দূর করতে চান সেক্ষেত্রে
ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। কারণ এতে আপনার পেট ঠান্ডা রাখে
এবং হজম ঠিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বর্জ্য আবর্জনা দূর করতে বেশ কার্যকারী
ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার খাবার তালিকায় প্রতিনিয়ত ইসবগুলের
ভুসি রাখতে পারেন।
ইসবগুলের ভুসি অপকারিতা
ইতিমধ্যে ওপরের আলোচনায় ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত আপনাদের জানিয়েছি।এখন অনেকেই আছেন যারা কিনা ইসবগুলের
ভুসি অপকারিতা অর্থাৎ ক্ষতিকার দিক সম্পর্কে খুব কমই মানুষ
জানে। তাই এ অংশে আমরা এসব ইসবগুলের ভুসি ক্ষতিকর দিক অর্থাৎ
অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
- ইসবগুলের ভুসি কম মাত্রায় খেলে বেশ উপকারী তবে বেশি মাত্রায় খেলে কিছু সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে অর্থাৎ ইসবগুলের ভুসি অপকারিতা হয়ে উঠতে পারে।
- আপনার যদি পেট ব্যথা বা পেট কামড়ানো অসুবিধা থেকে থাকে তবে ইসবগুল থেকে দূরে থাকা উচিত।
- এবং বেশি মাত্রায় হিসাব গুল খেলে পেট ব্যথা এবং পেট কামড়ানো সমস্যা হতে পারে।
- ডায়রিয়ার ক্ষেত্রেও ইসবগুল যেমন বাড়াতে পারে তেমনি ইসবগুল ডায়রিয়ার কারণ ও হতে পারে।
- আপনার কি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে গলা ফুলে গেছে? গা এবং হাত-পা চুলকাচ্ছে? ত্বকে রাশ উঠেছে? মাথা ঘুরাচ্ছে? তাহলে আপনি ইসবগুল খাচ্ছেন না তো? এই মুহূর্তে আপনার ইসবগুলের ভুসি মোটেও উচিত হবে না। পারলে বেশি বেশি পানি খান । একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
আশা করি ইসবগুলের ভুসি অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার
যদি আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে আমাদেরকে নিচে কমেন্টে জানাতে
পারেন। এবং আপনার যদি ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও অপকারিতা দিক সম্পর্কে
আরো জানতে চান তাহলে একজন ভালো চিকিৎসরের সাথে পরামর্শ নিন।
ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয় এবং খাওয়ার সঠিক সময়
অনেকেই আমরা আছি যারা ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে পরিচিত কিন্তু ইসবগুলের
ভুসি কিভাবে খেতে হয় এবং ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক সময় ও
খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না। তাই এই আলোচনায় আমরা ইসবগুলের
ভুসি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এ ক্লাস গরম দুধের সাথে ২ থেকে ৪ চামচ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে ইসবগুলের ভুসি খান এবং আপনি রাতে খেতে পারেন তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
- আপনার যদি ডায়রিয়া থেকে থাকে তবে ডায়রিয়া ভালো করতে চাইলে ৩ - ৪ চামচ টক দই সাথে ২ থেকে ৩ চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে পারে ফলে আপনার ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
- আপনি যদি খুবই দুর্বল এবং রোগা হয়ে থাকেন তাহলে সকালে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। কেননা ইসবগুলের ভুসি হজমে সহযোগিতা করে এবং রুচি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ওজন কমাতে এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চামচ ইসবগুলের ভুষি এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভাত খাওয়ার আগেই খান। যা আপনার ওজন কমাতে বেশ উপকারী। আশা করি ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে হয় এবং ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক সময় জানতে পেরেছেন।
ইসবগুলের ভুসি কি ওজন কমায়
যারা অনেকেই চিন্তিত আছেন যে কিভাবে নিজের ওজন কমানো যায় তার একটি সহজ উপায়
হচ্ছে ইসবগুলের ভুসি। ইসবগুলের ভুসিতে এক ধরনের ফাইবার থাকে
যা খাবার হজম হতে দেরি হয় বলে বেশিক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং এটি পেট
পরিষ্কার রাখে ফলে ইসবগুলের ভুসি ওজন কমাতে বেশ উপযোগী।
ইসবগুলের ভুসি দাম
ইসবগুলের ভুসি বাজার মূল্য অনুযায়ী এখন এর বর্তমান
মূল্য হচ্ছে ১০০ গ্রাম এর দাম ২২০ টাকা। এর মূল্য কখনো এক
থাকে না ওঠা নামা করে। এবং আপনি এটি বাজারে বা যেকোনো গ্রামের দোকানেও
পাবেন।
গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভ অবস্থায় অনেকে কষ্টকাঠিন্য ভোগেন তাই ইসবগুল ভুসি খেয়ে থাকেন
কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ইসবগুলের ভুসি কি গর্ব
অবস্থায় খাওয়া উচিত? উত্তরটি জি হ্যাঁ আপনি নিরাপদে গর্ভ অবস্থায়
ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন
তবে তার পাশাপাশি আপনাকে শাকসবজি অর্থাৎ যে
শাকসবজিতে বেশি ফাইবার রয়েছে সেই শাকসবজি খেতে
পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে
যদি আপনি সঠিক নিয়মে খেয়ে থাকেন। তারমানে আপনি যদি রাতে ভিজে
সকালে খান সে ক্ষেত্রে কোন উপকার পাবেন না।
আপনাকে এক গ্লাস পানিতে দুই থেকে তিন চামচ ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে একটু
নাড়িয়ে ফুরফুরে ওঠার আগেই সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে এবং এটি রাতে শোয়ার
আগে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় আশা করি গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লেখকের শেষ কথা
আমার কথা হচ্ছে আপনি যদি ইসবগুলের ভুসি প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকেন তবে
সেটি পরিমাণ মতন খান কারণ বেশি খেলে আপনার নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে
পারে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে সেটা আমরা উপরের অংশে ইসবগুলের ভুসি
অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছি।
এক কথায় বলতে গেলে
প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকার হয়েছে তেমনি ক্ষতিকারক দিক রয়েছে তাই পরিবার
মতন খান। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি তার
মধ্যে মূল বিষয় ছিল ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা ও
অপকারিতা নিয়ে।
এছাড়াও আপনাদের সাথে ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খেতে
হয় এবং গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা আরো অনেক
বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অন্যদের
সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
সিফাত ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url