শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা জেনে নিন

অনেকে আছেন যারা কিনা শিশুদের জিংক সিরাপ খাওইয়ে থাকেন কিন্তু উপকারিতা জানেন না। তাই আজকের এই আর্টিকালে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা এবং জিংক সিরাপ এর কাজ কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
জিংক সিরাপ এর উপকারিতা অনেক রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। আপনি যদি আপনার শিশুকে জিংক সিরাপ খাওয়ানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেল পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে কেননা এই আর্টিকেলে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা জেনে নিন

জিংক সিরাপ এর কাজ কি?

জিংক সিরাপ বাজারে এনেছে এসকেএফ ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। জিংক সিরাপ প্রতি চামচে রয়েছে জিংক সালফেট মনোহাইডেট ১০ মিলিগ্রাম। স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য শরীরে জিংক প্রয়োজন এবং শিশুর জন্মের পর কম ওজন এবং অপুষ্টি, ক্যালরি ঘাটতি দূর করতে জিংক সাহায্য করে। 

এছাড়াও জিংকের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, দেরিতে ক্ষত সুখায়, সাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যায়, রাত কানা হয় এবং অ্যাবেসন এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। জিংক সিরাপ আমাদের শরীরে অনেক কাজ করে যেমন
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ক্ষত দ্রুত শুকায়
  • তীব্র ডায়রিয়া রোধ করে
  • বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে
  • হজম শক্তি বাড়ায়

জিংক সিরাপ কেন খায়?

এই জিংক সিরাপ বাচ্চাদের খাবারের রুচি এবং শরীরের জিংকের ঘাটতি পূরণের জন্য এতটাই চমৎকার কাজ করে যে সকল মায়েদের কাছে জিংক সিরাপটি খুবই পরিচিত। কিছু বাচ্চা আছে খাবার খেতে চায় না খাবারে অরুচি তাদের জন্য এবং অনেক বাচ্চারা আছে পাতলা পায়খানা করে একেবারে নিপীয়ে যায় দুর্বল হয়ে যায় অর্থাৎ পাতলা পায়খানার সাথে জিংক শরীর থেকে বের হয়ে যায়।


সেই জিংকের ঘাটতি পূরণ করার জন্য এই জিংক সিরাপটি চমৎকার কাজ করে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষত নিরাময়, দ্রুত রক্ত জমাট বাধা এবং দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।আপনারা যদি বাচ্চাদের জিংকের অভাব পূরণ করতে চান তাহলে জিংক সিরাপটি সেবন করাতে পারেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।

জিংক সিরাপ এর উপকারিতা কি

উপরে আলোচনায় আমরা জিংক সিরাপ এর কাজ সম্পর্কে আপনাদের জানালাম এখন জিংক সিরাপ এর উপকারিতা গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জিংক সিরাপ এর অনেক উপকার রয়েছে। জিংক সিরাপ এর ৯টি উপকারিতা নিচে দেয়া হলঃ

১. ডায়রিয়া প্রতিরোধ
ডায়রিয়া প্রতিরোধে জিংক আমাদের শরীরে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেসব শিশুদের তীব্র ডায়রিয়া রয়েছে তাদের চিকিৎসাতে জিংক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম জিংক গ্রহণ করলে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং শিশুদের ওজন বাড়ে।

২. হরমনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে
যেসব মহিলারা হরমনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন সেসব মহিলাদের ক্ষেত্রে জিংক খুবই উপকারী কেননা জিংক হরমনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৩. ক্ষত নিরাময়
জিংক ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং আলসার ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত নিরাময় করতে চিকিৎসকরা জিংক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে তাই ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে জিংক অত্যন্ত কার্যকর।

৪. মলদ্বারে টিউমার
একটি গবেষণা অনুসারে পাঁচ বছর ধরে যদি কেউ ভিটামিন এ২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং জিংক সিরাপ গ্রহণ করে তাহলে মলদ্বারে টিউমার পাওয়ার ঝুঁকি ৪০% কমে যাবে।

৫. বিষণ্ণতা দূর করতে
গবেষণা অনুসারে দেখা যায় হতাশ এবং বিষন্নতায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে জিংকের মাত্রা কম থাকে তাই  অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সাথে যদি জিংক সেবন করা হয় তাহলে বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে।

৬. শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা
যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে সেসব রোগীদের জন্য জিংক সিরাপ খুবই উপকার। জিংক মানবদেহে সর্দি, শ্বাসযন্ত্র এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

৭. হাড় দুর্বল
যাদের শরীরে হাড় দুর্বল এবং গাটে ব্যথা করে তাদের জন্য জিংক সিরাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।জিংক হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে মজবুত এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৮. গর্ভাবস্থা জটিলতা
গর্ভাবস্থায় ওরাল জিংক সিরাপ গ্রহণ করার ফলে তাড়াতাড়ি শিশু জন্মের সম্ভাবনা ১৪% কমে যায় বলে মনে করা হয়। এছাড়াও যে সব গর্ভবতী মহিলারা রাতকানা রোগে ভুগছেন তারাও যদি জিংক সিরাপ সেবন করেন তাহলে এটি রাতে দৃষ্টি ফেরাতে সহায়তা করতে পারে।

৯. ভিটামিন এ
যেসব শিশুদের শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা কম থাকে সেই সব শিশুদের যদি জিংক সিরাপ নিয়মিত খাওয়ানো হয় তাহলে ভিটামিন এ এর মাত্রা কার্যকারী ভাবে বেড়ে যায় বলে মনে করা হয়।

শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা

শিশুদের শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়া, পুষ্টির অভাব, বাচ্চার ওজন কম হওয়া ইত্যাদি। এ সকল সমস্যা দূর করতে শিশুদের জিংক সিরাপ খাওয়ানো খুবই প্রয়োজন। অনেকেই আছেন যারা কিনা শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। শিশুদের জিংক সিরাপ এ অনেক উপকারিতা রয়েছে তা হলোঃ
  • ইমিউন সাপোর্ট বাড়ায়
  • মেধা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
  • ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে
  • তীব্র ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে
  • রুচি এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে
  • স্বাস্থ্য এবং ত্বক ভালো রাখে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
আশা করি শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনার শিশুর জন্য জিংক সিরাপ খাওয়াতে পারেন।

শিশুদের জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়মগুলি

উপরের অংশে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা গুলো আপনাদের জানিয়েছি এখন আপনাদের শিশুদের জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম গুলি জানাবো অনেকে আছেন শিশুদের জিংক সিরাপ খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না।
  • বাচ্চার ওজন ১০ কেজির নিচে হলেঃ খাবার খাওয়ার পর ১ চামচ করে দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে প্রতিদিন সকালে খাওয়ার পর ১ চামচ রাতে খাবার খাওয়ার পর ১ চামচ।
  • বাচ্চার ওজন ১০ থেকে ৩০ কেজি হলেঃ ভরা পেটে প্রতিদিন ২ চামচ করে ১ থেকে ৩ বার খাওয়াতে পারেন। এক কথায় বলতে গেলে সকালে ১ চামচ দুপুরে ১ চামচ এবং রাতে ১ চামচ ভরা পেটে খেতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

বড়দের জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে খাওয়ার ৩০ মিনিট পর প্রতিদিন ৪ চামচ করে ১ থেকে ৩বার খেতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

জিংক সিরাপ এর দাম কত?

জিংক সিরাপ এর মোট তিনটি বোতল রয়েছে যার মধ্যে ১৫০ মিলি বোতলের দাম পড়বে ৩৫ টাকা এবং ২০০ মিলি বোতলের দাম ৫০ টাকা।

জিংক সিরাপ এর অপকারিতা

জিংক যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমনি জিংক বেশি খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদি কোন শিশুকে কয়েক মাস ধরে উচ্চমাত্রায় জিংক খাওয়ানো হয় তাহলে রক্তশূন্যতা এবং অগ্নাশয়ের ক্ষতি হতে পারে এছাড়াও বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তা নিচে দেওয়া হলঃ

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • পেট ব্যথা
  • মুখে বিশ্রী স্বাদ
  • মাথাব্যথা
  • ডায়রিয়া
ওপরের উল্লেখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আপনার সন্তানের হয়ে থাকে তাহলে জিংক সিরাপ খাওয়া বন্ধ করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখকের শেষ কথা

আপনার শিশুকে জিংক সিরাপ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আজকেরে এই পোস্টে শিশুদের জিংক সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও জিংক সিরাপ এর কাজ কি এবং শিশুদের জিংক সিরাপ খাওয়ার নিয়ম আরো অনেক বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আশা করি আপনি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। জিংক সিরাপ সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্টে করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সিফাত ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url