চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে? কি খাওয়া উচিত দেখুন
গরমের শুরুতে একটি কমন রোগ দেখা যায় যার নাম হচ্ছে চিকেন পক্স অনেকে আমরা জলবসন্ত
বলে থাকি। এই চিকেন পক্স যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে তবে শিশুদের আক্রান্তের
হার বেশি। আজকের এই আর্টিকেলে চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে এবং চিকেন পক্স হলে
কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
চিকেন কক্সবাজার জল বসন্ত একটি ছোঁয়াচে রোগ যা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে
থাকে। এটি বেশিরভাগ ১০ বছরের নিচে বাচ্চাদের হয়ে থাকে যারা এই চিকেন পক্স রোগে
যারা ভুগছেন তারা অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে কিনা?
এবং
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত এই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আজকের এই
আর্টিকেলে এর পাশাপাশি বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয় কি এবং চিকেন পক্স কেন
হয়, কতদিন থাকে ইত্যাদি সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব আজকের এই আর্টিকেলে তাই
আমাদের সঙ্গে থাকুন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে ও কি খাওয়া উচিত জানুন
- চিকেন পক্স কেন হয়
- চিকেন পক্স এর লক্ষণ
- চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
- চিকেন পক্স কতদিন থাকে
- চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত
- বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয়
- চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়
- চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না
- আমাদের শেষ কথা
চিকেন পক্স কেন হয়
চিকেন পক্স খুবই সংক্রমণ একটি রোগ। এই চিকেন পক্স বা জল বসন্ত যা
ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
চিকেন পক্স এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ যেটা হাঁচি-কাশি এবং ত্বকে স্পর্শের
মাধ্যমে হয়ে থাকে
এছাড়াও এই চিকেন পক্স আক্রান্তর ব্যক্তির ত্বকে
ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাওয়া ২ দিন পরও ফুসকুড়ির খোসা থেকে অন্যরাও সংক্রমণ হতে
পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসকুড়ির খোসা এবং হাঁচি-কাশি বাতাসের মাধ্যমে
ছড়িয়ে অন্যজনেরও এই রোগ হতে পারে।
চিকেন পক্স এর লক্ষণ
কিভাবে বুঝবেন চিকেন পক্স হয়েছে আপনার কিংবা আপনার বাচ্চার। চিকেন বক্স
সাধারণত ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে
থাকে। এই রোগের জীবাণু অর্থাৎ ভেরিসেলা জোস্টার এই জীবাণু শক্তি ক্ষমতা
হচ্ছে ১৪ থেকে ২১ দিন এই দিনের মধ্যে এই জীবাণু এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ
করে। প্রথমেই যেই সাধারণ লক্ষণ গুলি দেখা যাবে সেগুলো হল
- ম্যাচ ম্যাচ ভাব
- মাথা ব্যথা
- শরীর ব্যথা
- হালকা জ্বর
- শরীর চুলকানো
- ছোট ছোট র্যাশ ওঠা বুকে অথবা পিঠে।
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন চিকেন পক্স হলে গোসল করা যাবে কিনা। অনেকেই
ভাবেন আবার গ্রাম অঞ্চলে এসব কথা খুবই প্রচলিত যে চিকেন পক্স হলে গোসল করা
যাবেনা এবং মাছ-মাংস খাওয়া যাবেনা ইত্যাদি এগুলো কতটুকু সত্য? এগুলো আসলে
বানোয়াট কথা আপনি বা আপনার বাচ্চার চিকেন পক্স হলে স্বাভাবিক পানি
দিয়ে গোসল করতে পারেন
তবে সাবান এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন
আর যদি পারেন ডাবের পানি দিয়ে গোসল করলে সবচেয়ে ভালো হয়। চিকন পক্স এবং
জল বসন্ত হওয়ার পর নিয়মিত গোসল করা যায় এবং গোসল করার শেষে শরীর শক্ত কাপড়
অথবা ঘুষে মুছা যাবে না নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছতে হবে।
চিকেন পক্স কতদিন থাকে
চিকেন পক্স হলে সাধারণত জ্বর হবে তার ২-৩ দিন পর জ্বরের তাপমাত্রা বাড়বে এবং
শরীরে ব্যথা শুরু হবে এবং র্যাশ বের হবে ও চুলকানি অনুভব হবে। বুকে পিঠে সারা
শরীরে ছোট ছোট আকারে র্যাশ ছড়িয়ে পড়বে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত সাধারণত র্যাশ
বের হয়
তারপর সেটা ধীরে ধীরে ফোসকার মতো আকার ধারণ করে এবং র্যাশ এর ভিতর রস
হয় এবং পুঁজের মতন হয়। এটি ৭ থেকে ১০ দিন পর এমনি শুকাতে শুরু করে এবং র্যাশ
গুলো থেকে খোসা উড়তে শুরু করে। এই চিকেন পক্স সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিন মতো
স্থায়ী হয়।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত
আমাদের দেশে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স নিয়ে মানুষের মনে কুসংস্কার
রয়েছে। অনেকেই আছেন যারা রোগীকে এই সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে
নিষেধ করেন যার কারণে রোগী আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মানুষের কথাই কান না
দিয়ে চিকন পক্স হলে ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ
করুন এই অংশে চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে আপনাদের
জানাবো।
- জল বসন্ত বা চিকেন পক্স হলে শরীরে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা হয় এবং ক্ষত কারণে কোন কিছু খাওয়া সম্ভব হয় না তাই এমন কিছু খাবার খাওয়াতে হবে যা সহজেই হজম হয়ে যায় এই সময় অতিরিক্ত ক্যালোরি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে তবে মুখে স্বাদ আনতে পাতলা সুপ খাওয়াতে পারেন রোগীকে।
- ইলিশ চিংড়ি জাতীয় মাছ ছাড়া যে কোন মাছের পাতলা ঝোল আর ভাতও খাওয়াতে পারেন।
- এ সময় ডাল খাওয়াটা খুবই জরুরী বিশেষ করে ডালের পানি যদি চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যায় তাহলে তার শরীর খুব ঠান্ডা থাকবে।
- এই সময়ে রোগীকে ফলের রস খাওয়াতে পারেন এতে শরীরের পুষ্টি জোগাবে তবে লেবুর রস কখনোই খাওয়াবেন না কারণ এতে উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক এসিড থাকে যা মুখের ক্ষত জ্বালা যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- চিকেন পক্স হলে গোল মরিচের গোড়ার সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে উপকার পাওয়া যায়।
- চিকেন পক্স হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল খেতে পারেন যা সংক্রমনের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- প্রচুর পানি খেতে হবে এবং শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে বিভিন্ন রকম ফলের জুস, স্যুপ, বাটা দুধ ও লাচ্ছি খেতে পারেন।
বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয়
এবার বলবো বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয় কি সে
সম্পর্কে। ডাঃ মাহবুব আহমেদ বলেন জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হলে
চিন্তার কোন কারণ নেই একটি সুখবর যেটা হচ্ছে এই রোগের টিকা আছে টিকা দিলেই
একমাত্র রক্ষাসভ্য
এবং টিকা দেয়ার পরও যদি চিকেন পক্স হয় তাহলে খুবই অল্প আকার
ধারণ করে আর এই চিকেন পক্স জীবনে ১ বারই হয়। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া
যাক বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।
- চিকেন পক্স হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হল প্রতিশোধক টিকা।
- চিকেন পক্সের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- রোগীকে পরিবারের সকলের কাছ থেকে দূরে রাখুন এবং বাইরে ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখুন।
- সাধারণত জল বসন্তের আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির কোন বিশেষ ঔষধের প্রয়োজন হয় না কোনরকম ওষুধ খায় ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় তবে বেশি বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- রোগীর শরীর ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং প্রতিদিন নতুন পোশাক পরিধান করান।
- রোগীকে বেশি করে পানি খেতে হবে এবং তরল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- বাচ্চাকে লক্ষ্য রাখবেন যে নখ দিয়ে যাতে ত্বক না চুলকায় তাই বাচ্চাদের নখ ছোট করে রাখতে হবে।
- চিকেন পক্স যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ তাই এই রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়াই উত্তম এবং রোগীর পাশে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা শ্রেয়। রোগের শরীর থেকে এ রোগের ভাইরাস সুস্থদের মধ্যে ছড়ায় বাতাসের মাধ্যম ছাড়াও রোগীকে স্পর্শ করা, ব্যবহৃত জামাকাপড় বিছানার চাদর ও অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিসের সংস্পর্শে করার মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পরে।
চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়
অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয় উত্তর হচ্ছে না যার
শরীরে একবার চিকন পক্স হয় তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যার
ফলে পুনরায় এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তবে কারো কারো দুইবার হলেও তেমন একটা
জোরদার প্রভাব ফেলে না।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না
চিকেন পক্স হলে যে সব ধরনের খাবার একদম খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কে আপনাদের এখন জানাবো। চিকেন পক্স হলে তেল, বাদাম, মাখন, নারিকেল অথবা চকলেট এসব জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে যার কারণে চিকেন পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়।
এমনিতেই শরীর সুস্থ রাখতে ডাক্তাররা অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার
খেতে বারণ করেন আর চিকন পক্স হলে মুখের ভেতরে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয় যার
কারণে ঝাল লাগলে প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে তাই এই সময় তেল ঝাল মসলা
খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
কিসমিস, আখরোট, চিনা বাদাম এক প্রকার অ্যামিনো এসিড থাকে যা চিকেন পক্সের
জীবাণ্য বংশবিস্তার করতে সাহায্য করে তবে এই অ্যামিনো এসিড শরীরের পক্ষে
ভালো কিন্তু চিকেন পক্সের সময় এইসব না খাওয়া ভালো।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকালে চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে এবং চিকেন পক্স হলে কি
খাওয়া উচিত এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি এর পাশাপাশি চিকেন পক্স কেন
হয়, হলে করণীয় কি এবং চিকেন পক্স কতদিন থাকে আরো অনেক বিষয়
বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি।
আবারো বলি চিকেন পক্স হলে
আপনি স্বাভাবিকভাবে গোসল করতে পারবেন তবে সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকে
বিরত থাকবেন এবং গোসল করার পর নরম কাপড় দিয়ে গা মুচ করবেন এবং যেসব
খাবারগুলি আর্টিকেলে নিষেধ করা হয়েছে সেই খাবারগুলি এড়িয়ে চলবেন।
আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন। এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে
তাহলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। আপনার যদি চিকেন পক্স আর কোন
প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন এবং আপনার মতামত জানাতে
পারেন। এই সকল বিভিন্ন রকম তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে প্রতিনিয়ত চোখ
রাখতে পারেন ধন্যবাদ।
সিফাত ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url